আর্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন উপকরন কি? যদি ছোট একটা লিস্ট করা হয় তাহলে শুরুর দিকেই আসবে তুলি বা ব্রাশ। রাঙ এর এই আর্টিকেলটিতে তুলি বা ব্রাশের আদ্যপ্রান্ত আলোচনা করা হবে। কোন তুলি আপনি কোন কাজে সিলেক্ট করবেন , কেন করবেন, কয়টা তুলি আপনার কাছে থাকতেই হবে, তুলির বিভিন্ন অংশ, বিভিন্ন অংশের কাজ, একটা আপাদমস্তক গাইডলাইন দেয়ার চেষ্টা করা হবে এই আর্টিকেলে। আশা করছি এই ২ পর্বের আর্টিকেল পড়ে ফেললে তুলি নিয়ে আর কারো কোন কনফিউশন থাকবে না। তুলি কিনতে গেলে আমরা যে কয়টা সমস্যায় পড়ি সেগুলোও সমাধান করে ফেলার চেষ্টা করা হবে। তাহলে শুরু করা যাক।
প্রথম সংজ্ঞা আসে তুলি আসলে কি?
যদি কাঠখোট্টা সংজ্ঞা বলি তাহলে বলা যায়, একটি হাতল বা হ্যান্ডেলে ফেরুলের মাধ্যমে ব্রিস্টল বা চুল লাগানো থাকে যা পেইন্টিং, ওয়াশিং, পাউডার প্রয়োগ ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হয়। এই সংজ্ঞাটা এখানে আর সহজ করছি না। তুলির বিস্তারিত আলোচনায় তুলির সবটুকুই আপনাদের জানা হয়ে যাবে।
পয়েন্ট আকারে তুলির বিভিন্ন বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করছি।
১। তুলির সাইজ কিভাবে নির্ধারন হয়?
সাধারনত ব্রাশ বা তুলির আকার হ্যান্ডেল বা হাতলে মুদ্রিত একটি সংখ্যা দ্বারা নির্দেশিত হয়। সংখ্যা যত বেশি, ব্রাশ তত বড় বা চওড়া। আরও স্পষ্ট করে বললে, ছোট থেকে বড় পর্যন্ত, আকারগুলি হল:
20/0, 12/0, 10/0, 7/0, 6/0, 5/0, 4/0 (এছাড়াও আছে 0000), 000, 00, 0, 1, 2, 3, 4, 5, 6 , 7, 8, 9, 10, 11, 12, 13, 14, 16, 18, 20, 22, 24, 25, 26, 28, 30।
এতো সহজে যদি তুলির সাইজ ঠিক করে ফেলা যেত তাহলে কোন সমস্যা ছিল না। সমস্যাটা দাঁড়ায় যখন একেক কম্পানি একেক সাইজের তুলি তৈরি করে। ধরা যাক, একটা কম্পানির ২০/০ তুলির সাথে অন্য কম্পানির ২০/০ তুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিলবে না। তাই আপনি কোন কম্পানির তুলি কিনছেন তার উপরই কোন নাম্বারের তুলি কিনবেন তা ডিপেন্ড করে। ভার্সেটাইল বা বহুমুখী কাজের জন্য মাঝারি আকারের ব্রাশ, বিস্তারিত কাজের জন্য ছোট আকারের ব্রাশ, এবং বড় এলাকা এবং ধোয়া আঁকার জন্য বড় আকারের ব্রাশ।
২। তুলি এবং ব্র্যান্ড
পাশের চিত্রটা একটু ভালো করে দেখুন। বিলিভ ইট অর নট, এই দুটো ব্রাশই ১০ নাম্বার ব্রাশ। শুধু মাত্র কম্পানি বা ব্রান্ড ভিন্ন হবার কারনে ব্রাশের সাইজও ভিন্ন হয়েছে। আবার ইউরোপিয়ান সিস্টেম এবং ইংলিশ সিস্টেমে তুলির সাইজ ভিন্ন, তথা রেজিওনের সাথে সাথেও ব্রাশের সাইজ ডিফার করতে পারে। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে আমি কি সবসময় একই ব্রান্ডের ব্রাশ ব্যবহার করবো? একই ব্রাশ অন্য কম্পানির নিতে চাইলে আমাকে কি করতে হবে? এক্ষেত্রে উত্তর হলো, আগের যেই ব্র্যান্ডের তুলি আপনি ব্যবহার করতেন সেই ব্র্যান্ডের সাথে নতুনটার সাইজ ইঞ্চিতে মেপে মিলিয়ে নেবেন। তুলিগুলোর ওয়েবসাইটে বা তুলির গায়ে ব্রাশের একচুয়েল সাইজ লিখা থাকে।
৩। তুলির থিকনেস
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ব্রাশের মধ্যে শুধু যে প্রস্থে পার্থ্যক্য হয় তা না। পুরুত্বেও পার্থক্য থাকে। আপনি শুধু মাত্র প্রস্থটুকু দেখে যদি অর্ডার দিয়ে দেন তাহলে আপনি যেমন ব্রাশ বা তুলি চাচ্ছিলেন তা নাও পেতে পারেন। আর পুরুত্বের পার্থ্যক্যটা খুবই গুরুত্বপূর্ন। যেমন, আপনি যদি জলরঙ বা খুব তরল পেইন্ট দিয়ে পেইন্টিং করেন তবে একটি পুরু ব্রাশ যথেষ্ট বেশি পেইন্ট ধরে রাখবে। যার ফলে কাজের মাঝখানে থেমে থেমে রঙ না নিয়ে একবার রঙ নিয়েই আপনি অনেক্কখন ধরে কাজ করতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি শুষ্ক-ব্রাশের কৌশলগুলির জন্য একটি ব্রাশ চান তবে আপনি কম পেইন্ট ধারণ করে এমন একটি ব্রাশ চাইতে পারেন। সেক্ষেত্রে কম পুরুত্বের ব্রাশ হলেও আপনার চলবে।
৪। তুলির পোস্টমর্টেম,
তুলি নিয়ে কাজ করতে গেলে এর বিভিন্ন অংশের নাম বা পরিচয় জানা আবশ্যিক না হলেও জেনে রাখা তো উচিৎ। নিচের ছবিটা খেয়াল করুন।
হ্যান্ডেল বা হাতলঃ
ব্রাশের হ্যান্ডেলটি আপনি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করবেন। এটিই সাধারনত আপনার হাতে থাকবে। তাই এটি আরামদায়ক হওয়া অত্যন্ত জরুরি। হাতন অনেক সাইজের এবং অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। কিছু থাকে একদমই ছোট, কিছু অনেক বড়। একেক হাতলে একেক ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হয়। যেমন কিছু হাতল কাঠের, কিছু বার্নিশ করা, কিছু বাঁশের তৈরি আবার অনেকগুলো প্লাস্টিকের। আপনি কোনটি ব্যবহার করবেন তা একান্তই আপনার কাজের ধরন, আপনার হাতের কমফোর্ট ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
ব্রিস্টলঃ
ব্রিস্টল হল ব্রাশের চুল, যা পেইন্ট ধরে রাখে। ব্রিসলগুলি অবশ্যই এবং বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের মধ্যে আসে। এগুলি প্রাকৃতিক পাশাপাশি সিন্থেটিক উভয়ই পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক ব্রিস্টলগুলি প্রাকৃতিক উত্স থেকে তৈরি করা হয় যেমন পশুর লোম যার মধ্যে রয়েছে শূকর, বলদ, ব্যাজার, উট, ঘোড়া ইত্যাদির লোম। সিন্থেটিক ব্রিস্টলগুলি মানবসৃষ্ট প্লাস্টিক যেমন নাইলন, পলিয়েস্টার বা উভয়ের সংমিশ্রণ। বিভিন্ন ধরণের পেইন্টের জন্য, বিভিন্ন ধরণের ব্রিস্টল ব্যবহার করা হয়। পেইন্টিংয়ের সময়, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে ব্রিস্টলগুলি শক্তভাবে ধরে রাখা হয় এবং পড়ে না যায়।
ফেরুলঃ
ফেরুল হল পেইন্ট ব্রাশের একটি অংশ যা ব্রিস্টলগুলোকে একত্রে ধরে রাখে এবং তাদের হ্যান্ডেলের সাথে সংযুক্ত করে। এটি মেটাল দিয়ে তৈরি। ফেরুল ব্রাশের আকার এবং ব্রিস্টলের সংখ্যার বা ধরনের উপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়ে থাকে। ব্রিস্টলগুলিকে জায়গায় রাখার জন্য এটির এক প্রান্তে ক্র্যাম্প করা হয় এবং অন্য প্রান্তটি হ্যান্ডেলের সাথে আঠা দিয়ে লাগানো থাকে। একটি ভাল মানের ফেরুলে দ্রুত মরিচা পড়বে না এবং অনেক ব্যবহারের পরেও আপনার ব্রিসটলগুলিকে হাতলে ধরে রাখবে।
টো এবং হীলঃ
টো হলো ব্রিস্টলের শেষ অংশ এবং হীল হলো যেখানে ব্রিস্টলসগুলো ফেরুলে যায়।
বেলীঃ বেলী সাধারনত ব্রিস্টলের মাঝখেন থাকে। পেইন্টিং করার সময়, বেলী পেইন্টের সর্বাধিক পরিমাণ ধরে রাখে। আপনি এটি কেনার আগে একটি পেইন্ট ব্রাশের বেলী পরীক্ষা করুন। ভালো মানের বেলী হাতে মসৃণ এবং পাঞ্চিং অনুভূতি দিবে।
বিভিন্ন আকার, আকার, দাম, উপকরণ, দৈর্ঘ্য এবং ব্রিসটলের প্রকারের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন রকমের পেইন্ট ব্রাশ পাওয়া যায়। আপনি কি ধরনের কাজ করবেন তার উপর নির্ভর করে পেইন্ট ব্রাশ নির্বাচন করতে হবে। একটা পারফেক্ট পেইন্টিং এর জন্য পারফেক্ট তুলি সিলেক্ট করা খুব গুরুত্বপূর্ন। একটা ব্যয়বহুল পেইন্টিং নিমিষেই সঠিক তুলির অভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যা একেবারেই কাম্য নয়। পরের পর্বে আমরা কোন তুলি ঠিক কি কাজে নির্বাচন করবেন তা নিয়ে আলোচনা করবো।
পরের আর্টিকেলের লিংকঃ https://rungcrafts.com/types-of-brushes/
ছবি সোর্সঃ গুগল