রাঙ এর এই আর্টিকেলটিতে আমরা কাগজ নিয়ে আলোচনা করবো। আর্ট শুরু করার আগে আমরা প্রায়ই কাগজ সিলেকশন নিয়ে একটা সমস্যায় পড়ি। অনেক সময় ভুলও করে ফেলি। ভুল কাগজ সিলেকশনের কারনে পুরো পরিশ্রমটা বৃথা হয়ে যায়। এই আর্টিকেলটা এমন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি যাতে অন্তত সিলি মিস্টেকগুলো আমাদের আর না হয়।
আপনি কি ধরনের কাগজ সিলেক্ট করবেন তা ডিপেন্ড করে আপনি কোন ধরনের কাজ করতে চাচ্ছেন তার উপর। যেমন ধরুন, পেন্সিল স্কেচ জাতীয় কাজে সার্ফেসে টেক্সচার যুক্ত কাগজগুলো উপযুক্ত অন্যদিকে জলরং বা এ ধরনের কাজের ক্ষেত্রে স্মুথ এবং ঘন সার্ফেস উপযুক্ত।
কাগজ সাধারনত পাউন্ডে ওজন করা হয়। পাউন্ড যত বেশি হবে, কাগজ তত ঘন হবে। তবে বাংলাদেশে জিএসএম এককটার সাথেও অনেকে পরিচিত। এক পাউন্ড নরমালি ১.৩৮ জিএসএম এর সমান। জলরঙের মতো মিডিয়ার জন্য, একটু হাই পাউন্ড (যেমন 140 পাউন্ড)- এর কাগজ দরকার, কারন এই ধরনের কাজে ঘন কাগজটা নিশ্চিত করা জরুরি। কারন হালকা কাগজ খুব সহজেই পানিতে কুঁচকে যাবে।
এখন দেখা যাক কোন কাজের জন্য কোন প্যাপার সবচেয়ে উপযোগী।
পেইন্টিং এর জন্য যেই কাগজ…
জলরংঃ
সাধারনত তিন ধরনের কাগজ জলরং এর জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। হট-প্রেস, কোল্ড-প্রেস এবং রাফ। হটপ্রেস কাগজের সারফেস স্মুথ এবং হার্ড যার কারনে ডিটেইল ওয়ার্ক করা যায় স্বাচ্ছন্দে। তবে এটি কিছুটা পিচ্চিল আর কনট্রোল করতে কষ্ট হয় বলে অনেক ক্ষেত্রে এভয়েড করা হয়। অন্যদিকে কোল্ড-প্রেসের সারফেস সেমি রাফ, এবং কিছুটা টেক্সচারও আছে। যার কারনে একই সাথে ডিটেইল ওয়ার্ক এবং ওয়াশের জন্য এটা ব্যবহার করা যায়। রাফ প্যাপারে একদম রিজিড একটা টেক্সচার থাকে তাই যারা ওয়াশ কালার ইউজ করেন তারা এটা ব্যবহার করে খুব মজা পাবেন। এই টেক্সচারের কারনে কালার পিগমেন্ট গুলা শুকানোর জন্য অতিরিক্ত সময় পায়।
অ্যাক্রিলিক এবং তেল রংঃ
আমরা অ্যাক্রিলিক এবং তেল রং শুধুমাত্র ক্যানভাসের জন্য মনে করলেও , আর্টিষ্টরা সাধারন কাগজেও এগুলো ব্যবহার করেন প্রায়ই। এটি ক্যানভাসের চেয়ে বেশি সাশ্রয়ী এবং বহুমুখী — বিশেষ করে যদি কোলাজ আর্টের জন্য। এক্রাইলিক বা তেল দিয়ে কাগজে আঁকার জন্য, মোটা কাগজই পারফেক্ট (জলরঙের মতো)। তবে, কাগজের টেক্সচারের ধরন পরিবর্তিত হতে পারে। আপনি হাই টেক্সচার বা লো টেক্সচার যেকোনো কাগজই ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে একটা জিনিস মাথায় রাখা যেতে পারে যে, হাই টেক্সচার কাগজে একটু বেশি রঙ লাগে। অন্যদিকে লো টেক্সচার কাগজে অল্প রঙ দিয়েই অনেক কাজ করে ফেলতে পারবেন।
আপনি চাইলে অ্যাক্রিলিক বা তেল রঙের সাথে একই ধরণের কাগজ ব্যবহার করতে পারেন, তবে তেল রঙ এর জন্য, আপনাকে গেসো দিয়ে সারফেসকে প্রাইম করে নিতে হবে। (এক্রাইলিক পেইন্টের জন্যও প্রাইম করতে পারেন, তবে প্রয়োজন নেই।) যদি তেল রঙের জন্য কাগজের সারফেসকে প্রাইম না করা হয় তাহলে পিগমেন্টটা কাগজে ডুবে যেতে পারে এবং নিস্তেজ দেখাতে পারে।
ড্রয়িং এর জন্য কাগজ…
পেইন্টিং এর মত ড্রয়িং এও ঠিক কি ধরনের কাজ করবেন তার উপর কাগজের ধরন নির্ভর করে। তবে কিছু সেমি রাফ সারফেসের প্যাড আছে যেগুলোতে আপনি চাইলে যেকোনো ধরনের ড্রয়িং করতে পারবেন। বাজারে বেশ সুলভ মূল্যে এগুলো পাওয়া যায়। ড্রয়িং এর জন্য কমপক্ষে ৮০ পাউন্ড বা ১২০ জিএসেম এর কাগজ বেছে নেয়া উচিৎ। এর কম জিএসএম এর কাগজ সাধারনত পাতলা হয় অনেক। আর কাগজের রঙ অফ হোয়াইট বা আইভরি হোয়াইট হলে ভালো। নিচে একটু বিস্তারিত আলোচনা করলাম,
পেনসিলঃ
একটি ডুডল বা স্কেচ পাতলা কাগজে ভাল কাজ করে, যেমন 20-পাউন্ড কপি পেপার, কিন্তু যেসব ড্রয়িং এর জন্য প্রচুর ছায়া, মিশ্রন এবং অতিরিক্ত মুছে ফেলার প্রয়োজন হয়, সেগুলোতে ভারী কাগজ ব্যবহার করাই শ্রেয়।
কালার পেনসিলঃ
গ্রাফাইটের মতো, রঙিন পেন্সিল অনেক ধরণের কাগজে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সামান্য টেক্সচারযুক্ত কাগজে কালার পেনসিলের কাজ খুব ভালো দেখায়। বেশি স্মুথ সারফেসে রঙটা ফুটিয়ে তোলা কঠিন।
চারকোল এবং ড্রাই প্যাস্টেলঃ
চারকোল আর ড্রাই প্যাস্টেলগুলো একটু ড্রাই এবং ডাস্টি তাই এগুলো নিয়ে কাজ করা একটু কঠিন। তবে যদি আপনি ১০০ পাউন্ডের বেশি এবং একটু তুথি হাই টেক্সচার কাগজ ব্যবহার করেন তাহলে এগুলো দিয়ে কাজ করা অনেকটাই সহজ হবে।
অয়েল প্যাস্টেলঃ
অয়েল প্যাস্টেলে তেল থাকায এগুলো দিয়ে স্মুথ সারফেসে ভালো কাজ করা যায়। এগুলো কখনোই একদম ড্রাই হয় না। তাই আপনি চাইলেই এগুলোকে লেয়ার এবং ব্লেন্ড করতে পারবেন। এই কারণে, পুরু কাগজ – এমনকি 300 পাউন্ড পর্যন্ত – আদর্শ।
হ্যান্ড লেটারিং বা ক্যালিগ্রাফির জন্য কাগজ…
যেকোনো ধরনের হ্যান্ড লেটারিং বা ক্যালিগ্রাফির জন্য মসৃণ কাগজ অপরিহার্য। যেকোন ধরনের টেক্সচার্ড পেপার ব্যবহার করলে একটি নিব ভেঙ্গে যেতে পারে বা আপনার লেটারফর্মের প্রবাহ ভেঙ্গে যেতে পারে। শুরু করার জন্য একটি স্বচ্ছ বন্ড পেপার ব্যবহার করে আপনার টাইপোগ্রাফি অনুশীলন করার চেষ্টা করুন। আর ফাইনাল কাজের জন্য ঘন ব্রিস্টল শীট ব্যবহার করবেন যেগুলো একেবারেই স্মুথ। অন্যান্য আরো স্মুথ সারফেসও ব্যবহার করা যেতে পারে, (যেমন হট প্রেস ওয়াটার কালার) তবে যেন কোন ওয়াক্সি ফিনিশ না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
উপরের ছবিগুলো রাঙ এর ক্যালিগ্রাফি। এখানে ক্যালিগ্রাফির জন্য হ্যান্ডমেইড প্যাপার ইউজ করা হয়েছে।
ছোট একটা টিপস দিয়ে শেষ করি। আপনি যদি শুধু প্র্যাক্টিসের জন্য একটা কাগজ চান যেটায় প্রায় সব ধরনের আর্ট নিমিষেই করতে পারবেন, তাহলে আপনার হাতের কাছে থাকা A4 (<80 GSM) কাগজটাই যথেষ্ট। এই কাগজটা একটু স্মুথ হওয়ায় কিছু ক্ষেত্রে বিড়ম্বনা হলেও, সহজলভ্যতার কারনে এটা সবসময়ই ভালো অপশন। তবে এটায় অভ্যস্ত হয়ে না পড়াই ভালো।
ছবি সূত্রঃ রাঙ এবং গুগল