loader image

হ্যান্ডমেড প্রোডাক্টের সঠিক দাম নির্ধারণ: অনলাইনে বিক্রির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ গাইড

হাতে বানানো জিনিস মানেই মনের ছোঁয়া। আপনি সময় দিয়েছেন, মনোযোগ দিয়েছেন, আর্ট নিয়ে খেটেছেন। কিন্তু একসময় সেই প্রোডাক্টটা যখন অনলাইনে বিক্রি করার পালা আসে, তখন সবচেয়ে বড় প্রশ্নটা দাঁড়ায়—“দাম কত রাখব?”

এই গাইডে আমরা রাঙ (rungcrafts.com)-এর অভিজ্ঞতা থেকে দেখাবো কিভাবে আপনি বাস্তবিক, প্রোফিটেবল এবং গ্রাহক-বন্ধু দামে আপনার হ্যান্ডমেড প্রোডাক্ট অনলাইনে বিক্রির জন্য সেট করতে পারেন।


💡 দাম নির্ধারণের গুরুত্ব

প্রোডাক্টের দাম ঠিকমতো নির্ধারণ না করলে দুইটি জিনিস ঘটতে পারে:

  • আপনি লোকসান করবেন বা প্রফিট তুলতে পারবেন না
  • অথবা গ্রাহক মনে করবে আপনার প্রোডাক্টের ভ্যালু নেই

রাঙ-এ আমরা প্রথম থেকেই এমন একটা প্রাইসিং স্ট্রাকচার বানিয়েছি যাতে:

  • গ্রাহক স্বচ্ছভাবে দাম বুঝতে পারে
  • আমাদের ক্রাফটারের পরিশ্রম ও কল্পনার যথাযথ মূল্য নিশ্চিত হয়

১. খরচ হিসাব করার ধাপ

‌📦 কাঁচামালের খরচ (Material Cost)

প্রতিটি ম্যাটেরিয়ালের খরচ আলাদা করে লিখে রাখুন। যেমন:

ম্যাটেরিয়ালপরিমাণইউনিট প্রাইসমোট
কাঠের বোর্ড১ টা৮০ টাকা৮০ টাকা
অ্যাক্রিলিক রঙ৩ রং২০ টাকা৬০ টাকা
গ্লু, ফিনিশিং৪০ টাকা
মোট খরচ১৮০ টাকা

রাঙ-এ আমরা প্রতিটি প্রোডাক্টের জন্য এরকম একটা কস্ট শিট মেইনটেইন করি।

🕒 সময়ের দাম (Labor Cost)

আপনার সময়েরও মূল্য আছে। একে আপনি ঘণ্টাভিত্তিক হিসাব করতে পারেন।

উদাহরণ:
আপনার লক্ষ্য ঘণ্টাপ্রতি ইনকাম = ২৫০ টাকা
একটা প্রোডাক্ট বানাতে লাগে = ২ ঘণ্টা
→ লেবার কস্ট = ২৫০ × ২ = ৫০০ টাকা

⚙️ ওভারহেড খরচ (Overhead)

যেসব খরচ সরাসরি প্রোডাক্টে যায় না কিন্তু প্রোডাক্ট তৈরির জন্য প্রয়োজন—সেগুলো ধরুন:

  • ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ
  • মোবাইল/ডিএসএলআর দিয়ে ছবি তোলা
  • প্যাকেজিং
  • ওয়েবসাইট খরচ (যেমনঃ rungcrafts.com পরিচালনার খরচ)

ধরা যাক প্রতিটি প্রোডাক্টে আপনার ওভারহেড দাঁড়ায় ১৫০ টাকা।

✅ মোট কস্ট = ম্যাটেরিয়াল + লেবার + ওভারহেড = ১৮০ + ৫০০ + ১৫০ = ৮৩০ টাকা

২. সেলিং প্রাইস নির্ধারণের সহজ ফর্মুলা

এবার আসল ফর্মুলা:

📌 সেলিং প্রাইস = কস্ট × মার্কআপ (Markup)
→ সাধারণভাবে, ২.৫ থেকে ৩ গুণ পর্যন্ত রাখা যেতে পারে

৮৩০ × ২.৫ = ২০৭৫ টাকা (রাউন্ড করে ১৯৯৯ টাকা করা যায়)

রাঙ (rungcrafts.com)-এ আমরা সাধারণত কাস্টমারদের ক্রয়ক্ষমতা, মার্কেট ট্রেন্ড এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু মাথায় রেখে ২.২x থেকে ৩x পর্যন্ত মার্কআপ রাখি।


৩. মার্কেট রিসার্চ করুন

একই ধরনের প্রোডাক্ট কোথায় কত দামে বিক্রি হচ্ছে সেটা যাচাই করুন।
তবে শুধু কম দামে বিক্রি করার জন্য নিজের প্রোডাক্টের ভ্যালু কমাবেন না।

যেমন, যদি আপনি রাঙ-এর মতো হ্যান্ড-পেইন্টেড হোম ডেকোর বানান, দেখুন Etsy, Daraz বা Facebook Marketplace-এ লোকেরা কীভাবে দাম নির্ধারণ করছে।


৪. ব্র্যান্ড ভ্যালু বুঝে দাম ঠিক করুন

আপনার প্রোডাক্ট যদি সত্যিকার অর্থে ইউনিক হয়—ডিজাইনে, স্টোরিতে বা প্যাকেজিংয়ে—তাহলে প্রিমিয়াম চার্জ করাটা স্বাভাবিক।

রাঙ-এ আমরা কাস্টমারদের জানিয়ে দেই, প্রতিটি প্রোডাক্ট বানানো হয়েছে লোকাল আর্টিজানদের হাতে, ইউনিক ডিজাইন ও ফিনিশিংসহ। তাই তার দাম একটু বেশি হলেও কাস্টমার সেটার পেছনের কাহিনী বোঝে।


৫. অফার বা ডিসকাউন্ট পরিকল্পনা করে রাখুন

  • বিশেষ দিনে (ঈদ, পূজা, ভালোবাসা দিবস) অফার দিন
  • তবে অফার দেওয়ার আগে বুঝে নিন—ডিসকাউন্ট দেওয়ার পরেও যেন আপনার প্রফিট থাকে

টিপস:
রাঙ-এর ক্ষেত্রে আমরা “Buy 2 Get 1 Free” টাইপের অফার মাঝে মাঝে দেই, যা প্রোডাক্ট কস্টের ওপর ভালোভাবে ভারসাম্য রেখে ডিজাইন করা হয়।


৬. শিপিং কস্ট কিভাবে ধরবেন?

বাংলাদেশে কুরিয়ার খরচ ভেরিয়েবল, তাই এই অপশনগুলো চিন্তা করতে পারেন:

  1. শিপিং আলাদা: দাম কম দেখায়, তবে চেকআউট-এ বাড়ে
  2. ফ্রি শিপিং: কাস্টমার পছন্দ করে, কিন্তু কস্ট প্রোডাক্ট প্রাইসে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়

রাঙ-এর ওয়েবসাইট rungcrafts.com এ আমরা দুই ধরনের অপশন দেই—ঢাকার ভিতরে ও বাইরে আলাদা চার্জিং পলিসি।


৭. প্রোফিট মার্জিন নির্ধারণ

হ্যান্ডক্রাফট প্রোডাক্টে ৩০%-৫০% পর্যন্ত প্রোফিট মার্জিন সাধারন। তবে যদি আপনি হোলসেল বা ডিলারশিপে বিক্রি করেন, সেখানে মার্জিন কম রাখতে হয়।


৮. দাম বাড়ানোর সময় কখন?

আপনার প্রোডাক্টের ডিমান্ড বেড়েছে?
নতুন কালেকশন এসেছে?
ম্যাটেরিয়াল দাম বেড়েছে?

→ দাম বাড়ানো যেতেই পারে।

রাঙ-এ আমরা প্রতিবার নতুন ডিজাইন ও উন্নত প্যাকেজিং আনার সময় মূল্য আপডেট করি—but আমরা সবসময় আগেই সেটা কাস্টমারদের জানিয়ে দিই।


৯. দাম প্রদর্শনের স্টাইল

  • দাম স্পষ্ট করে লিখুন
  • শিপিং চার্জ অন্তর্ভুক্ত কিনা জানিয়ে দিন
  • ডিসকাউন্ট থাকলে, আগের দাম ও নতুন দাম একসাথে দেখান

📌 উদাহরণ:
৳১৯৯৯ (Free Shipping)
বা
৳১৫০০ + ৳৭০ ডেলিভারি চার্জ


🔁 কাস্টমারকে প্রোডাক্ট ভ্যালু বোঝান

“এই জিনিসের এত দাম কেন?” প্রশ্নটা পাবেনই।

সেখানে উত্তর দিন:
“এই প্রোডাক্টটা মেশিনে তৈরি না—একজন কারিগরের হাতে, সময় দিয়ে, যত্ন নিয়ে বানানো হয়েছে। এইটা শুধু জিনিস না—এটা একটা গল্প।”

রাঙ-এ আমাদের কাস্টমার স্টোরিজ ও আর্টিজান স্টোরিজ জানার পর অনেকেই নিজের মতো করে প্রোডাক্ট কাস্টমাইজ করতে চান।


✅ চেকলিস্ট: দাম নির্ধারণ করার আগে নিশ্চিত হোন

  • সব ম্যাটেরিয়াল খরচ হিসেব করেছেন
  • নিজের সময়ের সঠিক মূল্য ধরেছেন
  • ওভারহেড অ্যাড করেছেন
  • প্রোডাক্ট কস্ট × মার্কআপ দিয়ে প্রাইস বের করেছেন
  • মার্কেট রিসার্চ করে রেঞ্জ চেক করেছেন
  • শিপিং চার্জ চিন্তা করেছেন
  • অফার বা ডিসকাউন্ট প্ল্যান রেখেছেন
  • দাম স্পষ্টভাবে কমিউনিকেট করেছেন

✨ উপসংহার

প্রোডাক্ট বানানোর পর দাম নির্ধারণটা কোনো ছোট কাজ নয়। এটা হচ্ছে আপনার ব্যবসার ফাউন্ডেশন। রাঙ-এ আমরা বারবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শিখেছি—দাম কেবল সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়, এটা একটা ভ্যালু কনভার্সেশন।

আপনার কাস্টমার যেন বুঝতে পারে, আপনি শুধু একটা প্রোডাক্ট দিচ্ছেন না, আপনি দিচ্ছেন সময়, ভালবাসা, এবং আর্টের একটা টুকরো।

👉 আপনি যদি আরও হ্যান্ডমেড প্রোডাক্টের দাম নির্ধারণের রিয়েল উদাহরণ দেখতে চান, তাহলে ঘুরে আসুন rungcrafts.com

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

0
    0
    Your Cart
    Your cart is emptyReturn to Shop
    Scroll to Top
    Skip to content