ছবি আঁকা অনেকেরই প্রিয় একটা শখের মধ্যে পড়ে, রং মনে হয় প্রশান্তির একটা জয়গা, কিন্তু যারা নতুন শিল্পের জগতে তারা অনেকেই বুঝতে পারেনা কোন রং কোথায় ব্যবহার করবো, কিভাবে করলে সেটা সুন্দর আর স্থায়ী হবে এতসব প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে ছবি আঁকাটাই আর হয়ে উঠেনা, তাই আজকে আমরা এমন একটা মিডিয়া নিয়ে বলবো যার ব্যবহার সর্বক্ষেত্রে , পাওয়া সহজলভ্য এবং মূল্য হাতের নাগালে।
“অ্যাক্রিলিক পেইন্ট হল অ্যাক্রিলিক পলিমার ইমালসন এবং প্লাস্টিকাইজারস, সিলিকন অয়েল, ডিফোয়েমারস, স্ট্যাবিলাইজারস, মেটাল সোপগুলিতে পিগমেন্ট দিয়ে তৈরি একটি পেইন্ট। যেটি অন্যান্য রঙ এর তুলনায় দ্রুত শুকায়। এক্রিলিক পেইন্টগুলি পানিতে দ্রবনীয় হলেও শুকিয়ে গেলে ওয়াটার প্রুফ হয়ে যায়। এক্রিলিক রঙ করার সময় কি পরিমান পানি বা মিডিয়াম ব্যবহার করা হয়েছে তার উপর নির্ভর করবে এটি জলরঙ, গাউচে,ওয়েল পেইন্টিং এর মত আচরন করবে নাকি নিজের বৈশিষ্টে অটুট থাকবে।
এক্রিলিক রঙ কি তা মোটামুটি কাঠখোট্টা করে হলেও জানলাম, কিন্তু এর ব্যবহার কোথায় কিভাবে করতে হবে এটা নিয়ে অনেকের অনেক প্রশ্ন থাকে সবগুলো প্রশ্ন সংক্ষেপে দেয়ার চেষ্টা করব।
এক্রাইলিক পেইন্ট সবচেয়ে বহুমুখী মাধ্যমগুলির মধ্যে অন্যতম, এর রংয়ের উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্যের কারনে আর যে কোন মিডিয়ার স্থায়ী হওয়ার জন্য সর্বক্ষেত্রে এর ব্যবহার রয়েছে ।
১। কাগজে এক্রেলিক ব্যবহারে পোস্টার কালার / ওয়াটার কালারের থেকে অনেক উজ্জ্বল আর স্থায়ী রং পাওয়া যায়, তবে এক্রেলিক কিছুটা ভারি রং হওয়াতে কাগজে ব্যবহারের জন্য অনেক সময় শিল্পির সুবিধামত কিছুটা পানিও ব্যবহার করা যায়, হ্যান্ডমেইড পেপার বাহ ওয়াটার পেপার যে কোন ভারী কাগজেই আপনি নিজের মত করে এক্রেলিক কালার ব্যবহার করতে পারবেন, পরবর্তীতে পানি লাগলেও এটা আর উঠে যাওয়া বা ছড়িয়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকেনা ।
২। কাঠের গহনা, কাঠের চাবিরিং, কানেরদুল, কাঠের চুড়ি, ঘরের দরজার নেমপ্লেট এখন অনলাইন বিজনেসের অনেক বড় মাধ্যম আর এর এক্ষেএেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে এক্রেলিক কালার। খুব কম সময়ে কালার শুকিয়ে যায় এবং সেটা স্থায়ী হয়, সরাসরি এটি কাঠে ব্যবহার করা যায়, আগে বা পরে কোন বার্নিসের প্রয়োজন হয়না।
৩। শিল্পির শিল্প শুধু কাগজেই থাকেনা, পোশাকেও ফুটে উঠে। আর এখন অনলাইন বিজনেসের একটা বড় জায়গা নিয়ে আছে এই হ্যান্ডপেইন্টেড পোশাক, মসলিশ শাড়ি থেকে শুরু করে ব্লাউজ, জামা, ট্রি-শার্ট ছেলেদের পাঞ্জাবিও, আর এই হ্যান্ডপেইন্টেড পোশাকের সবচেয়ে বড় মিডিয়া এক্রেলিক, যারা প্রথম শুরু করছে তারা এক্রেলিক দিয়েই করে থাকে, একবার ভালো করে কালার বসে গেলে সেটা কাপড়ের সাথে স্থায়ী হয়ে যায়।
৪। কাঠের, মাটির বিভিন্ন ধরনের গহনা আর্টে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় এক্রেলিক, এই ক্ষেত্রে কালারের সাথে পানি না মিশিয়ে শুধু কালার ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো এতে রংটা স্থায়ী হয় এবং দেখতে অনেক উজ্জ্বল লাগে।
৫। গ্লাসে কালার করার জন্য আমরা অনেক ক্ষেত্রেই কালার খুঁজে পাইনা, শহরের বাইরের দিকে গ্লাস কালার খুব কমই পাওয়া যায়, কিন্তু গ্লাস আর্ট সবারই অনেক পছন্দ, নিজের বাসার গ্লাসটা কিংবা সুন্দর কোন গ্লাসের ফুলদানিটা নিজের মত সাজাতে কারনা ভালোলাগে, সেক্ষেত্রে এক্রেলিক কালার ব্যবহার করা যায়, এবং অবশ্যই খেয়ার রাখতে হবে পানি মিশানো যাবেনা, তাহলে কালারটা বসেনা।
৬। প্লাস্টিকে আর্টের ক্ষেত্রে যেমন, ফোনের কাভার আর্ট, সাগ্লা আর্ট, বোতল আর্ট এই সব ক্ষেত্রেও এক্রেলিক মিডিয়া ব্যবহার হয়, এক্ষেএে শুকাতে যথেষ্ট সময় দিতে হয়, আর সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়ার জন্য কালারের পরে উপরে বার্নিস স্পে করে নিতে পারেন, তাহলে পানিতে ভিজলেও উঠবেনা।
৭। ঘরের দেয়ালে রঙ করতে চাইলে এক্রেলিক রঙ ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও এটি ব্যয় সাপেক্ষ হবে। তবে ছোট খাট কিছু আঁকতে চাইলে নির্দ্বিধায় ব্যবহার করতে পারেন। যদিও সাধারণত দেয়ালে আঁকাআঁকি করতে চাইলে প্লাস্টিক পেইন্ট, ডিসটেম্পার, লাক্সারি বা এনামেল পেইন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
দামঃ বাংলাদেশের যে কোন জায়গায় এক্রেলিক কালার পাওয়া যায়, এবং এর বাজার মূল্য খুবই কম, আলাদা ছোট কালার পটে পাওয়া যায়। যার মূল্য ২৫-৩০ টাকা করে পিস, আর সেট শুরু হয় ২২০ থেকে হাজারের ও আছে৷ টিউব গুলোর দাম একটু বেশি হয় সাধারনত। যেমন ছোট টিউবের দাম প্রতি পিস ৭০ টাকা।
সবকিছুর জন্য আলাদা আলাদা রং কিনলে খরচের সাথে রাখার জায়গায় ও অনেক সমস্যা হয়, সেক্ষেত্রে যারা নতুন তারা এক্রেলিক দিয়ে শুরু করতে পারেন। কারণ এক্রিলিক রঙ দিয়ে প্রায় সব ধরনের কাজই মোটামুটি করা যায়।